Shariah

icon

মুরাবাহা ...

মুরাবাহার শাব্দিক অর্থ হলো লাভ দেয়া / ফায়দা দেয়া। ইসলামী অর্থনীতির পরিভাষায় মুরাবাহা বলা হয় “ক্রয় মূল্যের উপর লাভ নিয়ে অপর কোনো ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করা”। পবিত্র কোরআনে মুনাফা নিয়ে লাভ করা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাইয়ে মুরাবাহা লাভজনক ব্যবসার একটি পদ্ধতি। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘হজরত হাকিম বিন হিযাম (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) তাকে এক দিনার দিয়ে বাজারে প্রেরণ করেন একটি বকরী খরিদ করার জন্য। তিনি গিয়ে এক দিনার দিয়ে একটি দুম্বা খরিদ করে আবার দুই দিনার দিয়ে বিক্রি করে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। আবার গিয়ে এক দিনারে একটি কোরবানীর পশু ক্রয় করে পশু ও অতিরিক্ত এক দিনার রাসুল (সা.) কে এনে দেন। রাসুল (সা.) ওই দিনার সদকা করে দেন এবং তার ব্যবসায় বরকত হওয়ার জন্য দোয়া করেন। তিরমিযি, আবু দাউদ) এই হাদিস দ্বারা ‘বাইয়ে মুরাবাহা’ এর বৈধ্যতা প্রমাণিত হয়। মুরাবাহার গুরুত্বপূর্ণ শর্তসমূহ : বাইয়ে মুরাবাহা শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিম্মের কয়েকটি শর্ত পাওয়া যেতে হবে। ১. ক্রয় বিক্রয়ের জিনিস পণ্য হতে হবে। ২. কোন প্রকার টাকা পরিশোধ করবে তা চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে। ৩. বিক্রিত মালের মূল্য টাকার অংকে নির্ধারিত হতে হবে। ৪. যে মাল বিক্রি করবে সে মাল বাস্তবে উপস্থিত থাকতে হবে। ৫. হালাল মাল হতে হবে। ৬. মাল অস্থাবর সম্পত্তি হলে এর ওপর বিক্রেতার পূর্ণ মালিকানা ও দখল থাকতে হবে। ৭. একই ব্যক্তি ক্রেতা ও বিক্রেতা হতে পারবে না; বরং দুই পক্ষ অবশ্যই থাকতে হবে।৮.ক্রেতা ও বিক্রেতার ইজাব ও কবুল দ্বারা চুক্তি সম্পাদিত হতে হবে।৯.মালামাল উপকারী ও প্রয়োজনী হতে হবে। ১০. বিক্রয়ের জিনিস হস্তান্তরযোগ্য হতে হবে। ১১. মাল ক্রেতার নিকট পরিচিত হতে হবে। ১২. মূল্য পরিশোধ ও মাল হস্তান্তরের মাধ্যমে চুক্তি কার্যকর হতে হবে। ১৩. কোনো পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না ১৪. শরীয়াহ পরিপন্থী নয় এরূপ যে কোনো শর্ত চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা যাবে।মুরাবাহার বৈশিষ্ট্য হলো মুরাবাহা চুক্তিতে মুনাফার হার বা সুনির্দিষ্ট অঙ্ক আলাদা করে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে । মুরাবাহা চুক্তি আমানত ও বিশ্বস্তনির্ভর বিক্রয় চুক্তি।
icon

মুদারাবা ...

মুদারাবা বিনিয়োগের বৈশিষ্ট্য হলো, মুদারাবা কারবারে এক পক্ষের পুঁজি - অন্য পক্ষের শ্রম, লাভ হলে চুক্তিসম্মত হারে ভাগ করে নেবে। লোকসান হলে তা পুঁজির মালিকের। তবে সেই ক্ষতি মুদারিব কর্তৃক নিয়ম লংঘন, অবহেলা বা চুক্তিভঙ্গের করণে হলে মুদারি্বক ক্ষতির দায় নিতে হবে, কারবার শেষে চুক্তি নবায়ন না হলে তা আপনা- আপনি বাতিল হয়ে যাবে। মুদারাবার মূলধন নগত অর্থ/স্বর্ণ হতে হবে। মূলধনের পরিমাণ প্রকৃতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। মুদারাবা বিনিয়োগ পারসেন্টেন্স নির্ধারণ করা বৈধ তা উভয় পক্ষ সম্মতিতেই হয়। ততটুকু মুনাফা গ্রহনই জায়েজ আছে। এখানে কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট নেই। কিন্তু মুনাফার পরিমান উভয় চুক্তিকারীর সম্মতিতে হতে হবে এবং এখানে মুনাফার হার সমান হওয়া জরুরী নয়। কিন্তু মুনাফার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা বা পণ্য নির্দিষ্ট করা বৈধ নয়। মুনাফা চুক্তির একটি উদাহরণ হলো- টাকা প্রদানকারী এ কথা বললো যে, লাভের ৩০/৩৫/৪০ ভাগ আমাকে দিতে হবে। এতে উভয় চুক্তিকারী সম্মত হলো। তাহলে চুক্তিকৃত মুনাফা অর্থদাতা পাবে, আর বাকীটা পাবে মুদারিব, কিন্তু যদি এ কথা বলে যে লভাংশ থেকে ৫০০০ টাকা আমাকে দিতে হবে অথাৎ ভাগ নির্দিষ্ট না করে নগদ অর্থের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে তাহলে উক্ত চুক্তি বৈধ হবে না। আর চুক্তির সময় মুনাফার হার উল্লেখ করলে আর্থিক হারে মুনাফা বণ্টন করা হবে। মাওলানা ইমরান আশরাফ ওসমানী ব্যাংকিং ও আধুনিক ব্যাবসা-বাণিজ্যের ইসলামী রূপরেখা, মাদানী কুতুবখানা। (প্রথম প্রকাশ মার্চ ২০০৭, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৭১) মুদারাবার প্রকারভেদ চুক্তির ভিত্তিতে মুদারাবা বিনিয়োগ ২ প্রকার। যথা: - ১) মুদারাবা মুতলাকা বা সাধারণ মুদারাবা যে মুদারাবা ব্যবসায় মুদারিবকে কোন ধরণের শর্ত আরোপ করা ছাড়া সাহিবুল মাল কর্তৃক ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হয়, তাকে আল-মুদারাবাতুল ইমাম মুতলাকাহ বা সাধারণ মুদারাবা বলা হয়। ২) মুদারাবা মুকাইয়াদা বা বিশেষ মুদারাবা যে মুদারাবা ব্যবসায় সাহিবুল মাল ব্যবসার ধরণ, মেয়াদ, স্থান ইত্যাদি নির্দিষ্ট করে দেয়, তাকে আল-মুদারাবা আল মুকাইয়াদা বা বিশেষ মুদারাবা বলে।